মামুনুল হক, আজহারী ও আহমাদুল্লাহ’র কাছে খোলা চিঠি

দেশে ভয়ঙ্করভাবে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। প্রতিদিনই মৃত্যু ও আক্রান্তের নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার সোমবার (০৫ এপ্রিল) থেকে দেশজুড়ে এক সপ্তাহের জন্য ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে। এর আগে সংক্রমণ রোধে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করলেও জনগণ খুব বেশি সাড়া দেয়নি।

জনগণের মাঝে এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সাথে চলাফেরা করার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেককে মাস্ক ছাড়াই চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জনসচেতনা বাড়াতে দেশের প্রথম সারির তিনজন আলেম মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী ও শায়খ আহমাদুল্লাহ’কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন লেখক, উপস্থাপক আসিফ এন্তাজ রবি।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন-

“প্রিয়
শায়খ মিজানুর রহমান আজহারী
শায়খ মুহাম্মদ মামুনুল হক
শায়খ আহমাদুল্লাহ,

আমার সালাম এবং ভালবাসা নিবেন। আপনারা নিজেরা খুব ভাল করে জানেন, আল্লাহ আপনাদের একটি ক্ষমতা দিয়েছেন। দেশের মানুষ আপনাদের কথা শোনে। আপনারা যাই বলেন, মানুষ সেটি মেনে চলার চেষ্টা করে। এটি আল্লাহ পাক প্রদত্ত একটি বিশেষ নেয়ামত। যে কথা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, মন্ত্রী, মিনিষ্টার বললে, মানুষ শুনবে না, সে কথা আপনারা বললে মানুষ শুনবে।

সারা পৃথিবী করোনার কারণে দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে আছে। বিশেষ করে, গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের অবস্থা খুব শোচনীয় পর্যায়ে গিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই। রোগী নিয়ে মানুষ এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছে। ডাঙ্গায় তোলা মাছ যেমন ছটফট করে মরে, তেমনি মানুষ শ্বাসকষ্টে এম্বুলেন্সে মারা যাচ্ছে। এর পিছনে হয়তো অনেক কারণ আছে। তবে মূল কারণ: মানুষের অসচেতনতা। সারা পৃথিবীর বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা নানান পরামর্শ দিচ্ছেন। ডাক্তাররাও অনুনয় করছেন। কিন্তু তাদের পরামর্শ আমরা মানছি না।

এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের কথা আগ্রহ নিয়ে শোনে। কেবল শোনে না, তারা সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। আপনারা তিনজন কী একই সাথে একটি কথা বলতে পারেন না, যাতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। একমাত্র আপনারা নির্দেশ দিলেই বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ সেটি পালন করবে।

আমি একজন সামান্য লেখক। আমার পথ এবং আপনাদের তরিকা আলাদা। কিন্তু দিনশেষে আমরা সবাই মানুষ, সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। এই একটি বিষয়ে আমরা কী একসাথে কাজ করতে পারি না? মানুষকে বলতে পারি না, আপনারা অযথা ঘরের বাইরে যাবেন না, হাত পরিষ্কার রাখবেন, মাস্ক পরবেন? পৃথিবীর সবচেয়ে সবচেয়ে বড় দুর্যোগে আপনারা যদি জোড়ালো ভূমিকা না রাখেন, এই নালিশ আমরা কার কাছে দেবো?

আপনাদের তিনজনের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ , আসুন, একটা টিম করি। সেই টিমে আপনারা থাকুন, ডাক্তার থাকুন, বিশেষজ্ঞ থাকুন। এই টিমের কাজ হবে _ জনসচেতনতা তৈরি করা।

করোনার মোকাবেলার জন্য অনেক টিকা বাজারে এসেছে। এসেছে নানান ওষুধ। তবে সবচেয়ে কার্যকরী যে দাওয়াই, সেটির নাম জনসচেতনতা। একমাত্র মানুষ যদি সচেতন হয়, তাহলে করোনা মোকাবেলা করা যাবে। মানুষের হেদায়ত হলে আল্লাহ আমাদের রহম করবেন।

আপনাদের তিনজনের কাছে আমার ফরিয়াদ, প্লিজ আপনারা এক যোগ করোনার বিরুদ্ধে জন সচেতনা তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা নিন।অশেষ শ্রদ্ধা। বিনীত নিবেদক আশীফ এন্তাজ রবি।”